আন্দোলনে শহীদ হতে মায়ের দোয়া চেয়েছিলেন খুবাইব
চব্বিশ বছর বয়সী কওমি মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ খুবাইব ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশে প্রায় ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় বিজয় মিছিলে যোগ দিয়ে শহীদ হন।ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর বিজয় মিছিলে তার অংশগ্রহণ একটি মর্মান্তিক ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়। যাত্রাবাড়ী থানার পেছনে ডেমরা রোডে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে।
পরিবারের এক সদস্যরা জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই খুবাইব রাস্তায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভে যোগ দিতেন। ৫ আগস্টের আগেও তিনি একবার গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, কিন্তু রাজপথ ছাড়েননি।
খুবাইবের চতুর্থ বোনের স্বামী জুনায়েদ হোসেন বলেন, ‘আমি তাকে রাস্তায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করতাম। কারণ তখন পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছিল… কিন্তু তিনি আমার কথা শুনতেন না।’
যাত্রাবাড়ীর কাজলারপাড় জামেয়া ইসলামিয়া ইব্রাহিমিয়া ইশাকিয়ার শিক্ষক জুনায়েদ বলেন, খুবাইব একই মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা সম্পন্ন করে সম্প্রতি শিক্ষক হিসেবে যোগ দিএকটি ধর্মপ্রাণ পরিবারে জন্মগ্রহণকারী খুবাইব ছিলেন তার ১১ ভাইবোনের মধ্যে নবম, যার মধ্যে ছয়জন বোন। তার বাবা মাওলানা আব্দুর রহমান (৭০) ছিলেন একটি মাদ্রাসার প্রধান (মুহতামিম)। আর তার মা আবিদা খাতুন (৬০) একজন গৃহিণী।
পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে খুবাইবসহ চারজন মাদ্রাসা শিক্ষক। বড় ভাই মাসুদুর রহমান ব্যবসায়ী। এই পরিবার দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাজলার পাড় এলাকায় বসবাস করছে।
খুবাইবের পরিবার তার নাম রেখেছিল হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সম্মানিত সাহাবী খুবাইব বিন আদিয়া আনসারী (রা.)-এর নামে, যিনি তার অটল বিশ্বাসের জন্য শাহাদাত বরণ করেন।
জুনায়েদ স্মরণ করেন, ‘খুবাইব তার নাম মাহাত্ম্যে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রায়ই শাহাদাত বরণের ইচ্ছা প্রকাশ করতেন। তিনি বলেন, খুবাইব তার বক্তৃতা এবং দৈনন্দিন কথাবার্তায় শাহাদাতের ধারণাকে মহিমান্বিত করতেন।
তিনি স্মরণ করেন যে ৪ আগস্ট, তার শাহাদাতের মাত্র একদিন আগে, খুবাইব তার মায়ের কাছে আল্লাহ যেন তার ইচ্ছা গ্রহণ করেন এই দোয়া চে ৫ আগস্ট খুবাইবের স্মৃতি স্মরণ করে জুনায়েদ বলেন, তার ভগ্নিপতি খুবাইব প্রতিদিন দুপুরের খাবার পর বিশ্রাম নিতেন। কিন্তু সেদিন জোহরের নামাজের পর তিনি দুপুরের খাবার খেয়ে বাইরে চলে যান এবং মাকে তার জন্য দোয়া করতে বলেন। ‘সেই সময় আমার শাশুড়ি এবং আমি তাকে বাইরে যেতে নিষেধ করেছিলাম কারণ পুলিশ রাস্তায় নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছিল।
জুনায়েদ বলেন, খুবাইব তাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে তার কিছু হবে না। খুবাইব এবং তার বাবার ড্রাইভার সাকিব একসাথে যাত্রাবাড়ীতে বিজয় মিছিলে যোগ দিতে যান। যখন শেখ হাসিনা সরকারের পতনের খবর ছড়িয়ে পড়ে, তখন সন্ধ্যা ৪টার দিকে তারা বিজয় মিছিলে যোগ দিতে যাত্রাবাড়ীতে যান।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন যাত্রাবাড়ী ক্রসিংয়ে পৌঁছি, তখন আমাদের মাদ্রাসার এক ছাত্র আমাকে বলে যে খুবাইব গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু সে জানত না খুবাইবকে কোথায় নেওয়া হয়েছে,’ তিনি বলেন। একটি গুলি তার পেটের ডান দিক দিয়ে প্রবেশ তিনি আরো বলেন, সাকিবও সেই সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি খুবাইবকে কোথায় নেওয়া হয়েছে। তাই সাকিবের প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করার পর তারা খুবাইবকে খুঁজতে বের হন। আরও কিছু হাসপাতালে খোঁজ করার পর একটি বেসরকারি হাসপাতালের একজন কর্মী তাদের ঢাকা মেডিকেলে যেতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, তিনি অনেক মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ সেখানে নেওয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন।
জুনায়েদ স্মরণ বলেন, পরে, আমরা ঢাকা মেডিকেলে যাই এবং প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর, আমি জরুরি বিভাগের পাশের একটি রুমে প্রায় ৫০-৬০টি লাশের মধ্যে খুবাইবের লাশটি খুঁজে পাই। পরে তারা হাসপাতাল থেকে কোনো মৃত্যু সনদ ছাড়াই একটি টোকেনের মাধ্যমে লাশ গ্রহণ করেন এবং একই রাতে তাকে কাজলারপাড মাদ্রাসা কবরস্থানে দাফন করেন।করে।য়েছিলেনয়েছিলেন।
Post a Comment